এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রায় সব ধরনের সবজির দামও আগের মতোই চড়া রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা যেভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাস্তবে বাজারে সেই বাড়তি দাম কার্যকর হয়নি। খুচরা বিক্রেতাদের মতে, সবজি ও মাছের দাম বেশি থাকায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে, ফলে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের ঘোষিত নতুন দরের সয়াবিন বাজারে আসেনি। প্রতি লিটার ১৮৯ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী আমানত উল্লাহ বলেন, গত দু-তিন সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। এ কারণে ডিমের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে দাম কিছুটা বেড়েছে। তিন-চার দিনের মধ্যে দাম ঠিক হয়ে আসবে।
সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। এতে প্রতি লিটার তেলের দাম দাঁড়ানোর কথা ছিল ১৯৫ টাকা। তবে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি। ফলে গতকাল বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঘোষিত নতুন দাম কার্যকর হয়নি; প্রতি লিটার সয়াবিন তেল এখনো ১৮৯ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মাছের দাম আগের মতোই চড়া, আর চালের বাজারেও তেমন পরিবর্তন নেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের মধ্যে ডায়মন্ড, মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ড ৮০ টাকা, রসিদ ৭২ টাকা এবং মোজাম্মেল মিনিকেট ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
কমেনি সবজির দাম
দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টির কারণে হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় পৌঁছেছিল। এখন সেই দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে দাম কিছুটা বেশি। মরিচের দাম কমলেও সবজির বাজার এখনো চড়া। বেশির ভাগ সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, কিছু সবজির দাম শতক ছাড়িয়েছে। সাধারণত এ সময় শীতের আগাম সবজি বাজারে আসে, কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে তা হয়নি।
বাজারে মাছের দাম আগের কয়েক সপ্তাহের মতোই চড়া রয়ে গেছে, আর চালের দামেও তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের মধ্যে ডায়মন্ড, মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ড ৮০ টাকা, রসিদ ৭২ টাকা এবং মোজাম্মেল মিনিকেট ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম এখন বেগুন ও টমেটোর। বর্তমানে ১০০ টাকার নিচে কোনো বেগুন পাওয়া যাচ্ছে না; আকার ও ধরনভেদে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে এখন টমেটো উৎপাদন না থাকায় ভারত থেকে আমদানি করা টমেটোই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
করলা, কাঁকরোল, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, লতি—এই সবজিগুলোর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, লাউয়ের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে সবজির মান খুব ভালো অর্থাৎ টাটকা হলে অনেক বিক্রেতা আরও বেশি দাম রাখেন। অবশ্য ৪০ টাকায় এক কেজি মিষ্টিকুমড়া ও ৩০ টাকায় পেঁপে কিনে কেউ কেউ সান্ত্বনা নিতে পারেন। কারণ, এগুলোর দামই একটু কম রয়েছে। কম রয়েছে আলুর দামও। এক কেজি কেনা যায় ২০-২২ টাকায়। পেঁয়াজের ৭৫-৮০ টাকায় স্থিতিশীল আছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সবজির দোকানে কথা হয় ক্রেতা মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবজির দাম তো অনেক বেশি। তার থেকেও বড় বিষয়, সবজি যেন একদরের পণ্য হয়ে গেছে। বাজারের সব দোকানেই অনেকটা একই দাম। দরাদরির তেমন সুযোগ নেই। আগে এমনটা ছিল না।

