Header – Before
Header – After

টেকনাফ স্থলবন্দর স্থবির, দেউলিয়ার পথে ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ স্থলবন্দর গত আট মাস ধরে সম্পূর্ণ স্থবির রয়েছে। বন্দর জেটিতে শেওলা জমে গেছে, ওয়্যারহাউসে কোটি টাকার রপ্তানিপণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে রয়েছেন।

জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। কিন্তু মিয়ানমারের মংডু শহর আরাকান আর্মি দখল করার পর থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা, আর শ্রমিকরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সাধারণ মানুষও এতে ভোগান্তিতে পড়েছে। এই বন্দর শুধু বাণিজ্য কেন্দ্র নয়, হাজারো মানুষের জীবিকা ও স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে মিয়ানমার থেকে মাছ, কাঠ, সুপারি, আদা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য আসত, আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো ভোগ্যপণ্য ও নির্মাণসামগ্রী। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং নাফ নদীতে নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ থমকে গেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল উদ্দিন জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ৬৪০ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৪০৪ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় হয় মাত্র ১১০ কোটি টাকা, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আয় শূন্য। ফলে রাজস্ব আয়ে ভয়াবহ পতন ঘটেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায় মিয়ানমারের জলসীমায় নাফ নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসার সময় চাঁদা দাবি করে মিয়ানমারের দুর্বৃত্তরা। এর ফলে আমদানি রপ্তানি কারকরা দীর্ঘদিন ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। আমদানি-রপ্তানি অতি দ্রুত চালু করা হলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে তাদের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্দর বন্ধ থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সমস্যা দ্রুত আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। তারা আরও বলেন, সীমান্তে চোরাচালান রোধ এবং রাজস্ব আয় রক্ষার জন্য বন্দর কার্যক্রম পুনরায় চালু করা অত্যন্ত জরুরি, এবং এ বিষয়ে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন।

টেকনাফ বন্দরে কোটি কোটি টাকার পণ্য আটকে থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও থমকে গেছে। বন্দরের পুনঃসচল হওয়ার সময় এখনও অনিশ্চিত। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই তাদের সংকট গভীর হচ্ছে। কর্মসংস্থানের অভাব বেড়ে বেকারত্ব বাড়ছে, আর আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি এবং হত্যাকাণ্ডও বাড়ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য প্রথম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। পরে ২৭ একর জমিতে ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট কোম্পানির মাধ্যমে ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পূর্ণাঙ্গ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়।

** মিয়ানমার থেকে পণ্য আসছে না টেকনাফ স্থলবন্দরে
** মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
** মিয়ানমার থেকে পণ্য আসছে না টেকনাফে
** দিনমজুর নুরুল এখন ৪৫০ কোটি টাকার মালিক!
** আইনগত ত্রুটির কারণে হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!