বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি উৎসের মধ্যে একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। দেশের পণ্য রপ্তানি টানা তিন মাস ধরে কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৪৩ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও, আগস্টে রপ্তানি কমেছে ২.৯৩ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৪.৬১ শতাংশ। ফলস্বরূপ, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরে এটি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.২ শতাংশ বেশি। ইপিবির বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। অন্যদিকে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় দেশের মোট পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হলো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের এ খাতের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হলো কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাতের রপ্তানি হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৫ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ৯.৫ শতাংশ কম।
এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি। দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।
