বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৩১০ জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ১৫ জনই শিশু। তবে টাইফয়েডের টিকা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে প্রতিদিন অন্তত ১২ শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি ও শক্তিশালীকরণ বিষয়ক এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই), ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
ফিরদৌসী কাদরী বলেন, দেশে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব এখনও অনেক বেশি। দূষিত পানি ও খাবারের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে টাইফয়েডের জীবাণু অনেকাংশে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। মৃত্যুহার যেমন বেশি, তেমনি জটিলতা তৈরি হলে চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়ে যায়। তাই টিকাই এখন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য
সভায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে ইপিআইয়ের উপপরিচালক শাহারিয়ার সাজ্জাদ জানান, ইউনিসেফ, গ্যাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহায়তায় ১২ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। তিনি বলেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে টিকা দেওয়ার হার ভালো। তবে খুলনা ও বরিশালে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছে। হাতে আছে আরও ১২ কার্যদিবস। কোনো স্কুল বা মাদ্রাসায় যদি কোনো শিশু টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন না করে, তবে তাকে ম্যানুয়ালি নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হবে।
সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভির সহায়তায় ভারতের বায়োলজিক্যাল ই লিমিটেডের তৈরি টাইফয়েড টিকা সংগ্রহ করেছে। পাকিস্তান, নেপাল, লাইবেরিয়া, মালাউই, সামোয়া ও জিম্বাবুয়ের পর বাংলাদেশে এই টিকাদান কর্মসূচি চালু হলো। সভায় টিকা নিয়ে গুজবের বিষয়ও আলোচনায় আসে। প্রধান অতিথি ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৭০ লাখ শিশু নিবন্ধিত হয়েছে, যার মধ্যে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত এক কোটি ৭০ লাখ শিশু টিকা পেয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে কোনো টিকা নিয়েই একটি মহল আপত্তি তোলে, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও এই প্রবণতা দেখা যায়। তবে সরকারের দেওয়া টিকাগুলো মানসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকর—এ বিষয়ে একাধিক গবেষণায় প্রমাণ রয়েছে। তাই কোনো গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষিত ও অনুমোদিত এ টিকা নিরাপদ। এত বড় পরিসরে আগে কখনও একসঙ্গে টিকা দেওয়া হয়নি। সরকারের হাতে সাড়ে পাঁচ কোটি টিকা মজুত আছে। যেসব শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই, তারাও টিকা পাচ্ছে।’
সচেতনতা ও অংশগ্রহণ জরুরি
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ দীপিকা শর্মা বলেন, অনেক অভিভাবক সন্তানের টিকা দিতে আগ্রহী নন– এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো শিশুই যেন এ কার্যক্রমের বাইরে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) এ টি এম সাইফুল ইসলাম জানান, দেশের ৪০ হাজার কওমি মাদ্রাসার প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর ৬০ শতাংশই নারী। তাদের পর্দা রক্ষা নিশ্চিত করতে নারী স্বাস্থ্যকর্মীরাই টিকা দেবেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে টিকা নিয়ে গুজব ছড়ানোয় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকেই ভুল বুঝতে পেরে পরে নিজেদের পোস্টে সংশোধনীও দিয়েছেন।
