জামিন আবেদন শুনতে চায়নি আদালত

বার্তা প্রতিবেদক: অর্থপাচারের মামলায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদনের শুনানিতে করতে অস্বীকার করেছে আদালত। সোমবার (২০ জুন) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কে এম এমরুল কায়েশ এই শুনানি করতে অস্বীকার করেন। ৩০৪ কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের বিরুদ্ধে। চারজন হলেন-এমএ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাজাহান।

NSU 3

আদালত সূত্রমতে, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কে এম এমরুল কায়েশ এ মামলায় জামিন চেয়ে তাদের আইনজীবীরা পৃথক চারটি আবেদন জমা দিলে আদালত এই আদেশ দেন। বিচারক বলেছেন, যেহেতু হাইকোর্ট তাদের জামিন আগে নাকচ করে দিয়েছে এবং বিষয়টি তার সাথে বিচারাধীন, তার এ বিষয়ে শুনানির এখতিয়ার নেই। বিচারক অবশ্য মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ জুন দিন ধার্য করেছেন। একই বিচারক ২৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ মামলায় একদিনের জন্য জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

সূত্রমতে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা নিয়ে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ২২ মে ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। এরপর রাত ১১টার দিকে তাদের থানায় নেওয়া হয়। এর আগে শুনানিকালে আদালত বলেন, অর্থ পাচার ও দুর্নীতি হত্যার চেয়ে বিপজ্জনক অপরাধ। একটি হত্যা একজন ব্যক্তি বা পরিবার বা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু অর্থ পাচার ও দুর্নীতি দেশ এবং জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। জামিন আবেদন আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে না হওয়ায় তা খারিজ করা হলো। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

NSU 2

আদেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গে গোপনে এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে থাকেন বেনজীর আহমেদ। তার উদ্দেশ্য ছিল গ্রেফতার এড়ানো। তবে তার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি কয়েকজন সংবাদকর্মী ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টিগোচর হয়।সংবাদকর্মীরা তার পিছু নেন। এ সময় আদালতের আদেশ অমান্য করে এভাবে চলে যাওয়ার কারণ তার কাছে জানতে চান তারা। এতে বেনজীর আহমেদ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। বিষয়টি দেখে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ও কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে এজলাস কক্ষে নিয়ে আসেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ৫ মে মামলাটি করে দুদক। ছয়জনের মধ্যে ওই চারজন আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে করা এ মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের ওই চার সদস্য ছাড়াও চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন হিলালীকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন, সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন।

পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন। সেই টাকা আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!