দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় বন্যা চলমান রয়েছে। বন্যা-পরবর্তী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর গড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। সে জন্য চাল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য রয়েছে। এই শুল্ককর ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান সই করা এই চিঠি দেয়া হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, দেশের আপামর জনগণের ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চালের আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। রোববার (২০ অক্টোবর) এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি হ্রাস করার ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের মূল্য ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন করা ও পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্যের নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা ও কৃষকদের উৎসাহ মূল্য দেয়ার জন্য চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান এবং ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি সংরক্ষণাগারে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল এবং ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গমসহ মোট ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। তবে বন্যা-পরবর্তীতে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দর বেড়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং ও অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবু খাদ্যশস্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সম্প্রতি দেশের ১৪টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ফলে আউশ, রোপা আমন এবং আমনের বীজতলার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাতে আমন ওঠার পরও চালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। ভারত সরকার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের আমদানি কমে যাওয়া ও বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চালের বাজার স্থিতিশীল ও সরকারি নিরাপত্তা মজুত বাড়ানো দরকার। সে জন্য বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির প্রয়োজন হতে পারে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের মূল্য দেশীয় বাজারের চেয়ে বেশি। সে কারণে বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক হ্রাস ও আগাম কর কমানো দরকার।