Header – Before
Header – After

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল স্থগিতের দাবি ব্যবসায়ীদের

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতে নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার দুই দিন আগে তা স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতেই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সমন্বয় সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি অপারেটররা ট্যারিফ বাড়াতে আগ্রহী, আর তাদের পেছনে যারা আছে, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বন্দরের বর্ধিত মাশুল স্থগিত রেখে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে সব ধরনের মাশুল বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বন্দরের বিভিন্ন সেবার মাশুল ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বন্দরের নতুন মাশুলের হার একমাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এখন তা ১৪ অক্টোবর রাত থেকে কার্যকর হবে। বাড়তি মাশুল কার্যকর হলে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম চেম্বারের আরেক সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবে দিনমজুর, শ্রমিক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের জনগণ।

তিনি বলেন, বিদেশি অপারেটরদের সুবিধার জন্য মাশুল বাড়ানো হয়েছে। ডিপি ওয়ার্ল্ড ও মায়ার্সক লাইনের পেছনে কে আছে, এজেন্ট কে, অফিসে কে যায়—সব খবর তাদের কাছে আছে। মোংলা ও পায়রা বন্দরে মাশুল বাড়ানো হয়নি, বাড়ানো হয়েছে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে। কিছু খাতে মাশুল ছয়গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, দীর্ঘ ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় তিনি কখনো বন্দরকে লোকসান করতে দেখেননি। তাই বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ব্যবসায়ীরা কতটা অতিরিক্ত খরচ নিতে পারবে, তা বিবেচনাও করা হয়নি।

স্বাগত বক্তব্যে বিজিএমইএ এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম বলেন, সংকট নিয়ে আজকের সভা। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দরের মাশুল এক মাসের জন্য পিছিয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দর লোকসান করুক। আমরা এটাও চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ি।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চার গুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কন্টেইনারে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেছেন, এর মধ্যে লালদিয়ার চর টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে ৩০ বছরের জন্য, আর বাকি দুই টার্মিনাল পরিচালনার মেয়াদ হবে ২৫ বছর।

চট্টগ্রাম বন্দরের ‘অস্বাভাবিক মাশুল বৃদ্ধির’ প্রতিবাদে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সমন্বয় সভা ডেকে আলোচনা করেন। সভার সভাপতিত্ব করেন আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ-এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও এস এম আবু তৈয়ব, সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!