Header – Before
Header – After

ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করা যাবে

মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ড রিচার্জ করতে আর স্টেশনে যেতে হবে না। ঘরে বসেই রিচার্জ করা যাবে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আগামী মাসেই এ সেবা চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসেই বিদ্যুৎ, মোবাইল, ইন্টারনেটসহ নানা বিল পরিশোধ করছেন। মেট্রোরেল যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এমন সুবিধা চালুর। অবশেষে সেই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে মেট্রোরেলে দুই ধরনের স্থায়ী কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে—র‍্যাপিড ও এমআরটি পাস। নতুন ব্যবস্থায় দুই ধরনের কার্ডই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো রিচার্জ করা যাবে। তবে টাকা রিচার্জ করার পর গ্রাহককে তাঁর স্থায়ী কার্ডটি একবার অন্তত স্টেশনে থাকা বিশেষ যন্ত্রে স্পর্শ করিয়ে হালনাগাদ করে নিতে হবে। অনলাইনে টাকা রিচার্জ করার পর একবার ওই যন্ত্রে স্পর্শ করিয়ে নিলে টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর স্পর্শ করতে হবে না। পুনরায় টাকা রিচার্জ করার পর আবার স্পর্শ করাতে হবে।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তাদের নিজস্ব স্থায়ী কার্ডের নাম এমআরটি পাস। অন্যদিকে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) স্থায়ী কার্ডের নাম র‍্যাপিড পাস, যা মেট্রোরেল ছাড়াও বাস, ট্রেনসহ অন্যান্য গণপরিবহনে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিত। স্থায়ী কার্ডের লেনদেন নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র বা ক্লিয়ারিং হাউস পরিচালনা করছে ডিটিসিএ। ঘরে বসে এমআরটি ও র‍্যাপিড পাস রিচার্জের প্রযুক্তিগত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেটা সফট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। স্টেশনে স্থাপিত যন্ত্রপাতির মান ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ঘোষণা দেওয়া হবে, কবে থেকে ঘরে বসেই এই কার্ড রিচার্জের সুবিধা চালু হবে।

ডিটিসিএ সূত্র জানিয়েছে, স্টেশনগুলোয় কার্ড স্পর্শ করে রিচার্জ করা টাকা হালনাগাদ করার যন্ত্র বসানো ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ডিটিসিএর ওয়েবসাইটে অ্যাপ থাকবে। এর মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করা যাবে। আগামী মাসেই সেবাটি চালুর আশা প্রকাশ করে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, স্টেশনে যেসব যন্ত্র বসানো হচ্ছে, সেগুলোর মান ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হলেই ঘোষণা দেওয়া হবে, কবে থেকে ঘরে বসে কার্ড রিচার্জ করা যাবে। এরপর ডিটিসিএর ওয়েবসাইটে অ্যাপ যুক্ত করা হবে।

সূত্র বলছে, বর্তমানে রিচার্জ করা টাকা ও গ্রাহকের সব তথ্য এমআরটি ও র‍্যাপিড পাসের ভেতরই রয়েছে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনের গেটে থাকা যন্ত্র তা পড়তে পারে। কিন্তু অনলাইন ব্যাংকিংয়ে রিচার্জ করলে তা সফটওয়্যারে থাকবে। ফলে সাধারণ গেটে টাচ করলে রিচার্জ করা টাকা দেখাবে না। এ জন্যই আলাদা যন্ত্র বসানো হচ্ছে, যা স্পর্শ করে রিচার্জ করা টাকার তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এরপর ওই কার্ড দিয়ে টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে মেট্রোরেলের গেটে স্পর্শ করে ঢোকা ও বের হওয়া যাবে।

মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী আরাফাত রহমান এটিকে খুবই ভালো উদ্যোগ হিসেবে মনে করছেন। তিনি বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে কার্ড রিচার্জ করতে অনেক সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়। এ ছাড়া নগদ টাকা দিয়ে রিচার্জ করতে হয়। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে তাঁকে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। তিনি মনে করেন, স্থায়ী ও একক যাত্রার সব ধরনের কার্ডের রিচার্জ ও কার্ড কেনা যত সহজ হবে, ততই যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে।

এমআরটি বা র‍্যাপিড পাস ব্যবহার করে যাত্রা করলে ১০ শতাংশ ভাড়া ছাড় দেওয়া হয়। বর্তমানে মেট্রোরেলের প্রায় ৫৫ শতাংশ যাত্রী এই দুই ধরনের স্থায়ী কার্ড ব্যবহার করছেন, বাকিরা একক যাত্রার কার্ডে ভ্রমণ করেন। বর্তমানে দুটি কার্ডেই সংকট দেখা দিয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় বলা হয়েছিল, মেট্রোরেল সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এবং পূর্ণ সক্ষমতায় প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। এই ব্যবস্থায় ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার এবং দিনে প্রায় ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। পাশাপাশি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মেট্রোরেল প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

এক সপ্তাহ আগে মেট্রোরেলের যাতায়াতের সময় বাড়ানো হয়। সময় আধা ঘণ্টা এগিয়ে আনার পর সকালে সাড়ে ছয়টায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ছে এখন। ওই স্টেশন থেকে রাতে সর্বশেষ ট্রেনটি ছাড়ছে সাড়ে নয়টায়। অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ছে ৭টা ১৫ মিনিটে। সেখান থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ছে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের আসার সময়ের ব্যবধানও দুই মিনিট কমানো হবে। তাতে মেট্রোরেলে দৈনিক যাত্রী পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেলের যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধ আরও সহজ ও আধুনিক করতে নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সরাসরি (পাঞ্চ করে) ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা চালুর কাজ চলছে। এছাড়া একক যাত্রার ভাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। এ ব্যবস্থাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউনিভার্সেল টিকেটিং সিস্টেম’ (ইউটিএস)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ডিএমটিসিএল ইতিমধ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে বর্তমানে চালু থাকা র‍্যাপিড পাস, এমআরটি পাস এবং একক যাত্রার কার্ড কার্যকর থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে, ব্যবস্থাটি চালু করতে ডিএমটিসিএল বিনিয়োগ করবে না। যন্ত্রপাতি বসানো, সফটওয়্যার স্থাপন ও লেনদেন সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টিকিট বেচার অর্থ থেকে একটা অংশ ঠিকাদারকে দেওয়া হবে। তা কত হবে, এখনো ঠিক হয়নি। ঠিকাদারদের কাছ থেকে পাওয়া দরপ্রস্তাবের ওপর এটি নির্ভর করবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মেট্রোরেলের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, সেটি ‘ক্লোজ লুপ’। এটি শুধু জাপানের সনি কোম্পানির কার্ড পড়তে (রিডিং) পারে। ফলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড বা অন্য ব্যবস্থা কাজ করে না। নতুন ব্যবস্থায় ভাড়া আদায়ের জন্য মেট্রোরেল স্টেশনগুলোয় নতুন কিছু যন্ত্র বসাতে হবে। সেগুলোয় ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড পাঞ্চ করে ভাড়া দেওয়া যাবে।

## মেট্রোরেল সংক্রান্ত সকল নিউজ পড়ুন-

** মেট্রোরেলে না চড়ে বেরিয়ে গেলে দিতে হবে ১০০ টাকা
** ব্যাংক কার্ড পাঞ্চ করে মেট্রোরেলের ভাড়া দেওয়া যাবে
** মেট্রোরেল চালু, বহন করা যাবে না মাংস
** মেট্রোরেলের ভেতরে থাকবে এমআরটি পুলিশ
** মেট্রোরেল রিচার্জে দুর্ভোগ, বিকাশ-রকেট সেবা কবে?
** মেট্রোরেলে ২৬০০ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার সুপারিশ
** মেট্রোরেলে টিকিট থেকে ২৪৪ কোটি টাকা আয়
** মেট্রোরেল সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি, টিকেটে ভ্যাট থাকছে না
** মেট্রোর র‍্যাপিড পাস কার্ড রিচার্জ অনলাইনে
** উধাও ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রো পাস, জবাব নেই
** দুই লাখ সিঙ্গেল টিকিট নিয়ে গেছেন যাত্রীরা
** ২০ লাখে কাজীপাড়া স্টেশন মেরামত, খুলছে শুক্রবার

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!