বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্মচারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই! এরকম একটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের সঙ্গে এত বৈষম্য ও অনিয়ম হয় এটা অবিশ্বাস্য। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যে দাবিগুলো করেছেন তার প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাই।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের দৈনিক ভিত্তিক পিয়ন কাম গার্ডদের চাকরি স্থায়ীকরণ, শ্রম আইন অনুযায়ী সব সুবিধাদি প্রদান, আন্দোলন সংগঠন করার কারণে শাস্তিমূলক বদলি ও চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন কর্মচারীরা।
ব্যাংকটিতে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ দৈনিক ভিত্তিতে তারা কাজ করে আসছেন। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। এসব কর্মচারীরা ১৯৯২ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকে নির্যাতিত ও বৈষম্যের শিকার। গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সরকারি ছুটি, ব্যাংকিং ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি ঈদ-পূজাতেও কোনো ছুটি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফরিদপুর জোনে কর্মরত আহসান হাবিব বলেন, ব্যাংকের বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি পেশ, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, সুধী সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। ২০১৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকেও আমাদের দাবি জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম উপদেষ্টা বরাবর আমরা বেশ কয়েকবার দাবি তুলে ধরেছি। আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠানে ৪০টি জোনাল অফিসের জোনাল ম্যানেজার, কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তুলে ধরেছি। ২০১৮ সালের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। প্রধান কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়েছি।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক দেশের একটি সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। দেশের আর কোনো এনজিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিয়মকানুন মেনে চলি। আমরা কাজ করলে মজুরি পাই, না করলে নেই। তারপরও প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে নানাভাবে শোষণ করে। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী বিদায়কালীন পেনশন দেওয়ার কথা বলে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে জমা করা হয়। যার পরিমাণ বছরে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৬০০ টাকা। আমাদের ২০ বছর চাকরি হলে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান সার্কুলার জারি করেছে আমরা ২০ বছর চাকরি করলে আমাদেরকে ৫ লক্ষ টাকা দেবে। এই সামান্য টাকা নিয়ে আমরা কি করব?