Header – Before
Header – After

গ্যাসের সিস্টেম লসে বছরে ক্ষতি ৪০০০ কোটি টাকা

গত অর্থবছরে দেশে প্রায় ১,৭৯৬ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএমসিএম) গ্যাস অপচয় হয়েছে। খুচরা মূল্যে এ অপচয়ের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৪,১০৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহে ‘সিস্টেম লস’ বলতে চুরি ও অবৈধ সংযোগ, পুরোনো পাইপলাইনে লিক, রক্ষণাবেক্ষণকালীন ক্ষতি, মিটার ত্রুটি এবং ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে গ্যাসের অপচয় বোঝানো হয়। শুধু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সিস্টেম লস এত ব্যাপক যে, তা দিয়ে প্রায় ২০টি নতুন গ্যাস কূপ খনন করা যেত বা ৪০০-৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই-তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্ভব হতো।

এই সিস্টেম লস কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ২০২১ অর্থবছর থেকে সরকারি তথ্য অনুযায়ী লসের হার ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সিস্টেম লস অনুমোদন করলেও, গত অর্থবছরে এটি দৈনিক গড় সরবরাহের প্রায় ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। ফলে গ্যাস সংকটে পরিবারগুলো তিনবেলা রান্না করতে হিমশিম করছে, আর শিল্পখাত সীমিত সরবরাহের কারণে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় হচ্ছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে হিসাব বহির্ভূত গ্যাসের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৫৯৭ মিলিয়ন ঘনমিটার। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৭৯ মিলিয়ন ঘনমিটার। প্রতি বছর দেশের জন্য এই ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সমান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ‍্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সরকারি ব্যবস্থাপনায় সিস্টেম লস কমানোর প্রচেষ্টায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অভিযান চালিয়ে অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদের পরপরই আবার একই স্থানে অবৈধ সংযোগ বসানো হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস ভলিউমের দিক থেকে সর্বোচ্চ। গত অর্থ বছর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে। আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পেট্রোবাংলার প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে গ্যাস সরবরাহকারী তিতাস গত অর্থবছরে সিস্টেম লসে আনুমানিক তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়ে।

তিতাসের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা শহর এবং নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জের মতো এলাকায় হাজারো অবৈধ সংযোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। মনিটরিং দল নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এই সংযোগ কেটে ফেলে। তবে সামগ্রিক প্রভাব খুবই কম। গত অর্থবছরে তিতাস প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার অবৈধ গৃহস্থালি সংযোগ এবং ৫৭৬টি বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে দুই লাখ ৯১ হাজার ও ৬৩৮। কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে কয়েক মাস অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযানে ধীরগতি ছিল। যা সামগ্রিক অর্থবছরের হিসেবে প্রভাব ফেলেছে।

গত অর্থবছরে বাখরাবাদের সিস্টেম লসের হার ছিল ৯.৮ শতাংশ, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এই কোম্পানি কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের ৩৫টি উপজেলায় গ্যাস সরবরাহ করে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলে আলম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি করছে; সেপ্টেম্বর মাসে সিস্টেম লস কমে ৬ শতাংশে নেমেছে। আলম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ পাইপলাইন অন্তত ৫০ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছিল এবং বিতরণ ব্যবস্থায় অনেক লিকেজ রয়েছে। এগুলো প্রতিস্থাপন বা মেরামত করলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই অঞ্চলের অনেক বাসিন্দা মনে করেন তারা অবৈধভাবে গ্যাস নেওয়ার ‘অধিকার’ রাখে, কারণ এখানে দেশের প্রধান গ্যাসক্ষেত্রগুলো অবস্থিত। তিনি বলেন, আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, যাতে জাতীয় সম্পদ অবৈধভাবে ব্যবহার না হয়।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান মিলিতভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯৬ হাজারের বেশি অবৈধ গৃহস্থালি সংযোগ ও ৫৪১টি অবৈধ শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে ১৯৭ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ হয়েছে। পেট্রোবাংলা নেটওয়ার্কে ২৫ হাজারের বেশি লিকেজ শনাক্ত ও মেরামত করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি বিতরণকারীর আওতায় প্রায় ৪৩ লাখ গৃহস্থালি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। নতুন আবাসিক সংযোগ ২০০৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে, কারণ এ ধরনের সরবরাহের লাভ শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগের তুলনায় কম।

** গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!