Header – Before
Header – After

গুলশান মার্কেটের ৪৪ দোকানের মধ্যে ই-রিটার্ন দেয় ৩টি

ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধান

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার জন্য রাজস্ব বোর্ড থেকে জোর দেওয়া হলেও আমলে নিচ্ছে না অনেক ব্যবসায়ী। ঢাকার অন্যতম এলাকা গুলশান-২ নম্বরের গুলশান মার্কেটে ৪৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে না। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (ভ্যাট গোয়েন্দা) এক প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি সংস্থাটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গুলশান মার্কেটে সবেচেয়ে বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ইলেকট্রনিকস পণ্যের। এছাড়া রেস্টুরেন্ট, স্যানেটারি, মিষ্টি, ওষুধ, এসি, টায়ার, সেলুন, ক্যামেরা বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত এই মার্কেটে থাকা দোকানগুলোতে প্রচুর বেচাকেনা হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। নিবন্ধন নিলেও নিয়মিত রিটার্ন ও ভ্যাট দেয় না কেউ কেউ। অথচ ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করছে। এতে করে সরকার প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এনবিআরকে দেশব্যাপী নিবন্ধনের বাইরে থাকা মার্কেটের দোকান ও শোরুমকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। তারা বলেন, সরকার অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে জোর দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেদন বলছে, গুলশান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনলাইনে রিটার্ন দিতে চাচ্ছে না। এরমানে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিতে অনলাইনের চেয়ে অফলাইনে বেশি মনোযোগী।

তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট আদায়ে এনবিআর যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারেনি। ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালু হওয়ার পর থেকে সরকার একবার এক ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইএফডি বা ইসিআর মেশিন বসানোসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তার কোনোটি সফল হয়নি। তাছাড়া শপিংমল ও চেইনশপ ছাড়া সাধারণত ক্রেতারা ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দেয় না। এরপরও তাদের কাছ থেকে একবার এক ধরনের নিয়ম করে ভ্যাট নিচ্ছে এনবিআর। কখনও ৫ কিংবা সাড়ে ৭- এভাবে নানা সময়ে নানা হার বেঁধে দিয়েছে এনবিআর। এসব কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা বিরক্ত। তারা বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই স্বল্প বা অশিক্ষিত। ফলে তারা ই-রিটার্ন সম্পর্কে কিছুই বুঝে না। সেজন্য তারা এসব কিছুর প্রতি গুরুত্বও দিচ্ছে না। রাজস্ব বোর্ড অংশীজনদে সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইন করে দেয়। যা কার্যকরও করতে পারে না।

এনবিআরের ২০১৯ সালের মূসক সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়েছে, শপিংমলে অবস্থিত সব প্রতিষ্ঠানকে মূসক বা ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। নিবন্ধন গ্রহণ না করার ফলে পণ্যের মূল্যের সঙ্গে মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকায় আদায় করা মূসকসহ মূল্য হতে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব কোষাগারে জমা হচ্ছে না। এতে অন্যান্য মার্কেটের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এনবিআরের এই নির্দেশনা পরিপালনে ব্যবসায়ীদের কারো কারো অনিহা রয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য চার কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি অনসন্ধানি দল গঠন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। গত ২ জুলাই মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি অনুসন্ধানকারী দল গুলশান-২ নম্বরে গুলশান মার্কেটে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (উত্তর) অধীনস্থ মার্কেট। এই মার্কেটে মূসক আরোপযোগ্য অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূসকের আওতায় এনে প্রকৃত করদায়িতা নিরূপণ এবং যথাযথ ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ওই মার্কেটে মোট ৪৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চালু অবস্থায় রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত ও ৮টি অনিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও অনলাইনের আওতায় আসেনি। রিটার্ন দাখিলের তথ্য নেওয়া হয়েছে আইভাস থেকে।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধনের আওতায় আসেনি- সারাদেশে এমন বহু ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে হোটেল, শপিংমল ও সুপারশপ। নানা কৌশলে বহু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন আওতার বাইরে রয়েছে। ফলে সরকার সঠিকভাবে ভ্যাট পাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশে এক কোটির মতো দোকান আছে। মাত্র ৫ লাখ বা তার কিছু বেশি দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে পেরেছে এনবিআর। আমরা বলেছিলাম একটি করে খাত চিহ্নিত করে ভ্যাটরে আওতায় আনা হোক। কিন্তু এনবিআর একবার এক ধরনের নিয়ম করে ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলে দেয়। তাতে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট থেকে মুখ ফেরানোর চেষ্টা করে। ফলে কাঙ্খিত মাত্রায় ভ্যাট আদায় হয় না। ই-রিটার্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই স্বল্প বা অশিক্ষিত। ই-রিটার্ন বুঝে তা অনলাইনে দাখিল করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম।

এ ব্যাপরে এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, করদাতারা পণ্যের মূল্যের সাথে ঠিকই ভ্যাট পরিশোধ করেছেন, কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী সরকারের পক্ষ থেকে এ ভ্যাট সংগ্রহ করেছেন তাদের অনেকেই সরকারি কোষাগারে তা জমা দিচ্ছেন না। ব্যবসায়ী সমাজকে এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। এ বিষয়ে সমন্বিত ও কঠোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!