কানাডার ‘বেগমপাড়া’ ইস্যুতে প্রথম বড় আলোচনার সূচনা হয় ২০২০ সালে। সে সময় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বহু প্রভাবশালী বাংলাদেশি—বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা—দুর্নীতির অর্থ পাচার করে স্ত্রী-সন্তানদের কানাডায় পাঠিয়েছেন। সেখানে তারা কিনেছেন ফ্ল্যাট ও বাড়ি, গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল জীবন। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে জানান, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চেয়ে সরকারি কর্মকর্তারাই বেশি সম্পদ পাচার করেছেন; পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তখন সরকারের কাছে বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ২৮ জনের তালিকা চায়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলো কাজ করছে। এরপর হাইকোর্ট বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে নির্দেশ দেয়। দুদক জানায়, শতাধিক ব্যক্তি প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তবে পরে তৎকালীন সরকারের চাপের মুখে এ বিষয়ে তদন্ত কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
তালিকাভুক্ত ২৮ জনের বেশির ভাগই সাবেক আমলা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, যার কানাডার মন্ট্রিয়াল ও টরন্টোতে চারটি বাড়ি রয়েছে। বিসিএস ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ও সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খানের টরন্টোতে একটি বাড়ি রয়েছে; তিনি বর্তমানে কারাবন্দি। এছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের টরন্টোতে তিনটি ফ্ল্যাট এবং সাবেক মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের মিসিসাগায় দুটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ, কানাডায় রয়েছে তার তিনটি বাড়ি। সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, কানাডায় রয়েছে তার তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট। সাবেক সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের মন্ট্রিলে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের টরন্টোয় রয়েছে তার পাঁচটি বাড়ি এবং ফ্ল্যাট।
সাবেক সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মন্ট্রিলে রয়েছে তিনটি বাড়ি। সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমের কানাডায় দুটি বাড়ি। সাবেক সচিব এম. নিয়াজ উদ্দিনের দুটি বাড়ি এবং একটি খামারবাড়ি। সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার হালদার তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। নাফিস সরাফতের রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট এবং বিনিয়োগ (শেয়ার)। শহীদ ইসলাম পাপলুর রয়েছে তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ। সাবেক এমপি তানভীর ইমামের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের তিনটি বাড়ি রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খানের রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রয়েছে চারটি বাড়ি এবং বিনিয়োগ। শামীম ওসমানের রয়েছে একটি বাড়ি। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদে মেয়ের নামে দুটি বাড়ি রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি এস কে সিনহার মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তিনটি বাড়ি ও বিনিয়োগ রয়েছে। এ তালিকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তাদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কানাডায় থাকেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ও তার পরিবারের নামে আছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, এসব ব্যক্তি কানাডায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, যদিও তাদের বৈধ আয়ের উৎস নেই। ফলে স্থানীয় কমিউনিটিতে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ। সোমবার (৬ অক্টোবর) দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
** সাবেক এমপি-মন্ত্রিদের বিদেশে ৫৮২ ফ্ল্যাট চিহ্নিত
** পাচার অর্থে বিদেশে বিনিয়োগ টি কে গ্রুপের
** রপ্তানির ছলে ১৫০০ কোটি টাকা পাচার
** মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আড়ালে দম্পতির অর্থপাচার
** মেঘনা গ্রুপের এক লাখ কোটি টাকা পাচার
** ছয় মাসে পাচার সম্পদ ফ্রিজে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক
** অর্থ পাচারকারীদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে
** পাচারের টাকায় বিদেশে ‘কামাল পরিবারের’ সাম্রাজ্য
** লোপাটের ৬১৬ কোটি টাকা কানাডায় পাচার
** পাচারের অর্থ ফেরাতে শ্রীলঙ্কার সহায়তা চেয়েছে ঢাকা
** পাচারের টাকায় ৮ গ্রুপের বৈশ্বিক সাম্রাজ্য
** পাচারের টাকায় দুবাইয়ে বাপবেটার অট্টালিকা
** ছেলের টিউশন ফি’র নামে ৫০০ কোটি টাকা পাচার
** ‘ট্যাক্স এক্সপার্ট’র সহায়তায় পাচারের অর্থে আদায় হবে কর
** অর্থপাচারে অভিযুক্ত ৩৭৮ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
** নগদের ২৩৫৬ কোটি টাকা দুর্নীতি ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
** অর্থপাচার ও ব্যাংক ধ্বংস: রক্ষকরা ভক্ষক
** পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে তিন সংস্থার জোট
** ইউসিবির সাবেক পরিচালকের অর্থপাচারের অভিযোগ
** প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে
** ১৩ প্রতিষ্ঠানের পাচার ৪১৮ কোটি টাকা
** এলপিজি আমদানিতে ২২শ কোটি টাকা পাচার!
** মেঘনা গ্রুপের পাচার লক্ষ কোটি টাকা
** ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার, পাঠাও-উবারকে নোটিশ
** এস আলম : ২ এলসিতেই পাচার ১০ হাজার কোটি টাকা

