চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যজট নিরসন ও খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ‘দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ ও ধ্বংস কার্যক্রম সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বুধবার (১৪ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারির কথা জানানো হয়। এনবিআর জানিয়েছে, এ নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত পণ্য খালাস নিশ্চিত করা, শ্রম, অর্থ ও কর্মঘণ্টা সাশ্রয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো, অবকাঠামো ও জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কন্টেইনার জট হ্রাসের মাধ্যমে বন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খালাস না হওয়া কন্টেইনারগুলোর কারণে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পুরোনো কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্যগুলো বিস্ফোরণের ঝুঁকিসহ বন্দরের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রচলিত নিলাম প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কার্যকর সমাধান দিতে পারছে না।
এছাড়া শর্তযুক্ত বা নিয়ন্ত্রিত পণ্য খালাসে জটিলতা, অনিষ্পন্ন মামলা, দরদাতার মাধ্যমে পণ্য খালাস না হওয়া, লজিস্টিকসের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিলাম ও নিষ্পত্তিযোগ্য (যানবাহন ব্যতীত) পণ্য বিক্রি, ব্যবস্থাপনা ও ধ্বংস প্রক্রিয়া সহজ করতে একাধিক নির্দেশনা সংবলিত বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।
নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যসমূহ সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ না করে (বিশেষ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) প্রথম নিলামে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দামে বিক্রয় করা যাবে। তবে আমদানি বা রপ্তানি নীতিমালার আওতায় শর্তসাপেক্ষ, নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ পণ্য, কিংবা যেসব পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়েছে অথবা অন্য যেকোনো কারণে নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি সম্ভব নয়—সেসব পণ্য ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করার উদ্দেশ্যে বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিনামূল্যে হস্তান্তর করা যাবে।
দুই দফা নিলামের পরও যদি কোনো পণ্য বিক্রি না হয় বা দরপত্র পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে তৃতীয় নিলাম ছাড়াই ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বোচ্চ প্রস্তাবমূল্যে ওই পণ্য বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, মেয়াদোত্তীর্ণ বিপজ্জনক পণ্য বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যসমূহ যদি পরীক্ষণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবহার উপযোগী হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়, তাহলে তা প্রকৃত ব্যবহারকারী, বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট সর্বোচ্চ অফারে বিক্রয়ের বিধানও সংযোজিত হয়েছে।
নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করতে জারি করা এ বিশেষ আদেশ কার্যকর হলে বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কন্টেইনার জট কমবে। এতে বন্দরের কার্যক্রম হবে আরও নির্বিঘ্ন, সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিকারকদের খরচ হ্রাস পাবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

