ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস এলএনজি আকারে ঢাকায় আনার উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের সাড়া আশানুরূপ নয়। দাম বেশি হওয়ায় তারা অনাগ্রহী বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিকল্প হিসেবে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ভোলা থেকে গ্যাস এলএনজি করে ঢাকায় এনে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করতে ঘনমিটারপ্রতি খরচ হবে প্রায় ৫০ টাকা, যেখানে ব্যবসায়ীরা দিতে ইচ্ছুক ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলাম তাদের মতামত নেওয়ার জন্য। এফবিসিসিআই, বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। তারা সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তবে প্রাক্কলিত দর ৫০ টাকার মতো শুনে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সূত্রের তথ্যমতে, ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে বৈঠকের পর ১৬০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠায় পেট্রোবাংলা। তবে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যারা ঘনমিটারপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত মূল্য দিতে রাজি। মাত্র একজন উদ্যোক্তা ৫০ টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে, ভোলা থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস আনার বিষয়ে ৯টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে, যার মধ্যে গ্যাজপ্রম, সিসিডিসি ও সিএমসিসহ চারটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন ও মাইনস) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীদের মতামত নিতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তবে বিষয়টি জটিল হওয়ায় এখনই সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। ভোলা থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস পরিবহনের খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো এখনও আর্থিক প্রস্তাব দেয়নি, তাই ব্যয় নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তার ধারণা, সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহনের খরচের কাছাকাছি খরচ হতে পারে এলএনজিতেও। বর্তমানে ইন্ট্রাকো গ্রুপ ভোলা থেকে সিএনজি আকারে দৈনিক প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঢাকায় সরবরাহ করছে, যার দাম ঘনমিটারপ্রতি ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা। এর মধ্যে প্রায় ১৭ টাকা বিভিন্ন ফি ও মাশুল হিসেবে সরকার ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর তহবিলে জমা হয়।
বর্তমানে পুরোনো শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা এবং নতুন শিল্পে ৪০ টাকা নির্ধারিত। পুরোনো কারখানায় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা, আর নতুন কারখানায় ৪২ টাকা। এলএনজির পাশাপাশি পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। আগের আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা ছিল ভোলা-বরিশাল-খুলনা রুটে পাইপলাইন নির্মাণের, তবে অন্তর্বর্তী সরকার সেই রুট পরিবর্তন করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা রুটকে চূড়ান্ত করেছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ভোলা-বরিশাল রুটের সমীক্ষা আগে সম্পন্ন হয়েছে এবং বরিশাল-ঢাকার প্রাক-সমীক্ষার জন্য সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পাইপলাইন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগতে পারে অন্তত চার বছর।
দ্বীপ জেলা ভোলায় বর্তমানে দুটি গ্যাসক্ষেত্র ও নয়টি কূপ রয়েছে, যার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৯ কোটি ঘনফুট। তবে চাহিদা কম থাকায় দৈনিক মাত্র সাত থেকে আট কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে ভোলায় আরও ১৫টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এসব কূপের কাজ সম্পন্ন হলে দৈনিক উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্তমানে ভোলায় প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

