Header – Before
Header – After

এনআরবিসির মুনসিফ আলীর সব শেয়ার জব্দ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার সৈয়দ মুনসিফ আলীর সব শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ১৯১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ মামলায় বুধবার ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৫-এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে এর আগে গত মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে। বর্তমানে শেয়ারহোল্ডারদের কেউই আর পরিচালনা পর্ষদে নেই।

জানা গেছে, ইউসিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এনআরবিসি ব্যাংকে সৈয়দ মুনসিফ আলীর এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৫টি শেয়ার ক্রোক বা জব্দের আদেশ দিয়েছেন অর্থঋণ আদালত। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন মুনসিফ আলী। এখন তাঁর শেয়ার রয়েছে মাত্র ছয় লাখ ১৮ হাজার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউসিবির এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে অনেক আগে মাল্টিপ্ল্যান লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়েছিলেন সৈয়দ মুনসিফ আলী। ওই ঋণের গ্যারান্টর ছিলেন তাঁর স্ত্রী শামীমাতুন নাসিম। তবে ঋণ পরিশোধ না করায় সুদসহ বকেয়া টাকার পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি টাকা। এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে মুনসিফ আলী এক কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন, যার মূল্য ছিল প্রায় ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা (ডলারে পরিশোধিত)। প্রথম আট বছরে তিনি বোনাস শেয়ার হিসেবে আরও ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৫টি শেয়ার পান। ফলে তাঁর মোট শেয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৫টি। তবে ২০২০ সালে ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই তিনি এক কোটি শেয়ার পাঁচজনের নামে হস্তান্তর করেন।

এনআরবিসি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার বিক্রির টাকায় সৈয়দ মুনসিফ আলী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সাধারণভাবে একটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শেয়ারের দর বাড়ে। তবে উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারের তিন বছর শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। লকইন সময় হিসেবে যা বিবেচিত। যে কারণে কৌশলে তিনি অন্যের নামে শেয়ার স্থানান্তর করেছিলেন। ওই শেয়ার বিক্রি করতে তাঁর কোনো বাধা ছিল না।

উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সৈয়দ মুনসিফ আলীর নাম দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত—ঢাকার পান্থপথের সুবাস্তু টাওয়ারে অবস্থিত মাল্টিপ্ল্যান লিমিটেড এবং কানাডার ওমের স্ট্রিটের মাল্টিপ্ল্যান কানাডা লিমিটেড। গত ২৬ আগস্ট থেকে তিনি ধাপে ধাপে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। সেদিন তাঁর হাতে মোট শেয়ার ছিল এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৫টি। প্রথম ধাপে ২৬ আগস্ট তিনি ৩০ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। এরপর ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চার দফায় মোট এক কোটি ২০ লাখ শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করেন। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর আরও ১৭ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৩টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন, যা ১৪ অক্টোবর বিক্রি সম্পন্ন হয়। বর্তমানে তাঁর হাতে রয়েছে মাত্র ছয় লাখ ১৮ হাজার ১৪২টি শেয়ার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, আদালতের আদেশের আগেই সৈয়দ মুনসিফ আলী তাঁর অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।

২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়টি ব্যাংকের একটি হলো এনআরবিসি ব্যাংক। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে গত ১২ মার্চ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়াকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচালকের পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়।

** তিন ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাং
** পাচার ও পুঁজিবাজার কারসাজির ‘মাস্টার’ আদনান

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!