কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: জবস, এআই অ্যান্ড ট্রেড’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে প্রায় ৭ শতাংশ চাকরি এআইয়ের কারণে সরাসরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অন্যদিকে, প্রায় ১৫ শতাংশ চাকরি এই প্রযুক্তির সহায়তায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ পাবে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে একই সঙ্গে নতুন সম্ভাবনা ও বড় ঝুঁকি বয়ে আনবে। এ অঞ্চলের প্রায় ১৫ শতাংশ চাকরি এআই প্রযুক্তির সহায়তায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে, অন্যদিকে প্রায় ৭ শতাংশ চাকরি সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে—যা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, কারণ এখানকার অধিকাংশ মানুষ কম দক্ষ, হাতে-কলমে বা কৃষিনির্ভর পেশায় যুক্ত। তবে এই প্রভাব সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। বিশেষ করে মাঝারি শিক্ষিত ও তরুণ কর্মীরা—যারা রুটিনধর্মী অফিস বা হালকা জ্ঞাননির্ভর কাজে নিয়োজিত—তারা এআই-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারানোর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তবে প্রতিবেদনে এআইয়ের ইতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানবশ্রমের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারবেন। এ ধরনের পেশায় নিয়োজিতরা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি মজুরি সুবিধা পেতে পারেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, যদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্কারের সঙ্গে এআই গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করা যায়, তবে তা বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে এবং উচ্চ উৎপাদনশীল শিল্পে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে—যা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে, যা উপেক্ষা করা যায় না। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই কিছু অফিসভিত্তিক চাকরির বিজ্ঞাপন প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে—যা শ্রমবাজারে পরিবর্তনের প্রাথমিক ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করা এবং শ্রমবাজারে গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও পুনঃপ্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে শ্রমিকদের প্রযুক্তিনির্ভর নতুন দক্ষতায় পারদর্শী করে তোলার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এআই’র উত্থান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক বড় পরীক্ষার সময়। সঠিক নীতি, দক্ষতা উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলে, এআই হুমকি নয়—বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।

