Header – Before
Header – After

উদ্ধার হয়নি ১৯ কেজি স্বর্ণ, সব আসামি জামিনে

বেনাপোল কাস্টম হাউস

বেনাপোল কাস্টম হাউসের লকার থেকে চুরি যাওয়া ১৯ কেজিরও বেশি স্বর্ণ চার বছরেও উদ্ধার করা যায়নি। সিসি ক্যামেরা আর প্রশাসনিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যেও ঘটা এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ সচেতন মহল। দুর্ধর্ষ এ চুরির মামলায় সবশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা ও বহিরাগতদের দিয়ে লকারের দেখভাল করায় এ চুরি সংঘটিত হয়েছে। আসামিরা চুরি করা স্বর্ণ বিক্রি করে ফেলায় আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কাস্টমসের পাঁচ কর্মকর্তাসহ সাত জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে, অভিযুক্ত আসামিরা সবাই রয়েছেন জামিনে। সীমান্ত পথে পাচারের সময় এসব স্বর্ণ আটকের পর জমা ছিল কাস্টম হাউসের লকারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী প্রথম থেকে আন্তরিক হলে তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার কঠিন হওয়ার কথা নয়। এমন ঘটনায় পরিকল্পনাকারীরা পার পেয়ে যাওয়ায় বেনাপোল কাস্টমসের পর ঢাকা বিমানবন্দরেও অপরাধীরা স্বর্ণ চুরির সাহস দেখিয়েছে।

সিআইডির দেয়া চার্জশিটের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর টানা ৩ দিন কাস্টমস হাউস বন্ধ থাকার সুযোগে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার গোডাউনের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভেতরে যায়। পরে ভল্টের তালা ভেঙে ১৯ কেজি ৩১৮.৩ গ্রাম স্বর্ণ চুরি করে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এ ভল্টের চাবি ছিল তৎকালীন ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলের কাছে। শাহিবুলের ঠিক আগে দায়িত্বে ছিলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিশ্বনাথ কুণ্ডু। সন্দেহের তীর তার দিকেও রয়েছে। গোডাউনের অন্যান্য লকারে স্বর্ণ ও ডলারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও সেগুলো চুরি হয়নি। ভল্ট ভাঙার সময় কাস্টম হাউসের সব সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ১২ নভেম্বর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে চুরির মামলা করেন বেনাপোল পোর্ট থানায়। এ ঘটনায় ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মামলাটির অগ্রগতির জন্য তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন কাস্টমসের পাঁচ কর্মকর্তাসহ সাত জনকে আটক দেখিয়ে চার্জশিট দেয় সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, চুরি করা স্বর্ণ আসামিরা বিক্রি করে ফেলায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন এবং আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন: খুলনা বটিয়াঘাটার জয়পুর গ্রামের রনজিৎ কুণ্ডুর ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ বিশ্বনাথ কুণ্ডু, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বাঁধুলি খালপাড়া গ্রামের মৃত জালাল সরদারের ছেলে কাস্টমস হাউসের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার, বরিশাল আগৈলঝাড়ার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মৃধা, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের অম্বিকাপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ আর্শাদ হোসাইন, খুলনার তেরখাদার বারাসাত গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমান মল্লিকের ছেলে বেনাপোল কাস্টমসের এনজিও কর্মী আজিবার রহমান মল্লিক, বেনাপোলের ভবেরবের পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের ছেলে শাকিল শেখ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার চারুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ।

বেনাপোলের সাধারণ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল বলেন, ‘এতগুলো স্বর্ণ তো খেয়ে ফেলার জিনিস না। স্বর্ণ বা স্বর্ণ বিক্রির টাকা এতো দিনে কোনোটাই উদ্ধার হলো না! আসামিরা আটক হলেও সবাই জামিনে। আমাদের দেশের প্রশাসন এখন অনেক দক্ষ। আরও আন্তরিক হলে চুরি যাওয়া স্বর্ণ বা স্বর্ণ বিক্রি হয়ে থাকলে তার টাকা উদ্ধার কঠিন হবে না।’

স্বর্ণ চুরির মামলার প্রধান আসামি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল বলেন, ‘আমার পূর্ববর্তী কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ফাইল কেবিনে থাকা সব স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা বুঝে পেয়েছি। তবে আমাকে ফাইল কেবিনের একটি মাত্র চাবি দেয়া হয়েছিল। বাকি চাবিগুলো তিনি দেননি। এ চুরির সঙ্গে আমি জড়িত না। যদি আরও ভালভাবে তদন্ত করা হয় তবে প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়বে ও স্বর্ণ উদ্ধার হবে।’

মামলার তদন্তকারী যশোর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ চুরির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলা বিচারাধীন রয়েছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, ‘কাস্টমস লকার থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনা চার বছর পার হয়ে গেল। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে স্বর্ণ উদ্ধার না হওয়ায় আমরা হতাশ।’

শার্শা উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারি আক্তারুজ্জামান লিটু বলেন, ‘সিআইডি পুলিশ আসামিদের আটক দেখিয়ে চার্জশিট দেয়ার পর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে স্বর্ণ চুরি করে চক্রটি অনেকটা পার পেয়ে যাওয়ায়, এবার ঢাকা বিমানবন্দরেও স্বর্ণ চুরিতে অপরাধীরা সাহস পেয়েছে। যদি বেনাপোল কাস্টমস থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার হতো, তবে হয়তো আবারও নতুন করে দেশের এ সম্পদ লুটের কথা শুনতে হত না।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!