বাংলাদেশের নির্মাণ শিল্পে নতুন এক মাইলফলক সৃষ্টি করেছে আবুল খায়ের স্টিল লিমিটেড (এএকেএস)। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কোম্পানিটি উদ্বোধন করেছে বিশ্বের দ্রুততম রিবার রোলিং মিল, যা সম্পূর্ণভাবে জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এসএমএস গ্রুপ (SMS Group) দ্বারা সরবরাহ ও স্থাপিত। এই অত্যাধুনিক মিলটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ লাখ মেট্রিক টন এবং এটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো ও নির্মাণ বাজারের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বের দ্রুততম রিবার উৎপাদন
এসএমএস গ্রুপের তথ্যমতে, মিলটি ইতিমধ্যে ১০ মিলিমিটার ব্যাসের ডিফর্মড বার উৎপাদনে ৫৫.০৪ মিটার প্রতি সেকেন্ড গতিতে রোলিং করে নতুন বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেছে। উন্নত স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, উচ্চ গতির উৎপাদন ও নির্ভুল গুণমান, এই তিনের সমন্বয়ে এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক রিবার রোলিং মিল হিসেবে স্বীকৃত।
প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের সমন্বয়
মিলটিতে ৮ মিলিমিটার থেকে ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত রিবার উৎপাদন করা যাবে। এতে স্থাপিত হয়েছে একাধিক আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। যার মধ্যে রয়েছে-ECOFlame+ বার্নার, যা কম NOₓ নিঃসরণ ও অধিক জ্বালানি দক্ষতা নিশ্চিত করে; Elotherm® ইনডাকশন ফার্নেস, যা বিলেটের তাপ ক্ষতি পুনরুদ্ধার করে শক্তি সাশ্রয় করে; EBROS® এন্ডলেস বার রোলিং সিস্টেম, যা নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা ৮ % বৃদ্ধি ও উপকরণ অপচয় ২ % পর্যন্ত কমায়; MEERdrive® ব্লক সিস্টেম, যা প্রতিটি পাসে আলাদা মোটর নিয়ন্ত্রণে অধিক স্থিতিশীল গুণমান নিশ্চিত করে এবং যন্ত্রাংশের ব্যবহার ৬০ % পর্যন্ত হ্রাস করে; High-Speed Delivery (HSD®) সিস্টেম, যা উচ্চ গতিতেও নিখুঁতভাবে রিবার ডেলিভারি নিশ্চিত করে।
এসএমএস গ্রুপের মতে, এসব প্রযুক্তি একদিকে উৎপাদন ব্যয় (OPEX) ও মূলধন ব্যয় (CAPEX) কমাবে, অন্যদিকে একেএস-কে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক স্টিল উৎপাদকদের কাতারে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের নির্মাণে এক নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশ বর্তমানে বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্থানীয়ভাবে উচ্চমানের রিবার উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি দেশের আমদানি নির্ভরতা কমাবে এবং নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করবে। পরিবেশবান্ধব বার্নার প্রযুক্তি ও তাপ পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা এসএমএস গ্রুপ ও আবুল খায়ের স্টিলের টেকসই উৎপাদন নীতির প্রতিফলন।
এই বিষয়ে এসএমএস গ্রুপের এপ্যাক ও মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকা অঞ্চলের চিফ সেলস অফিসার বার্নহার্ড স্টিনকেন বলেন, ‘এই প্রকল্প আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক অনন্য উদাহরণ। গতি, দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধবতা, এই তিনের সমন্বয়ে আমরা এমন এক রোলিং মিল তৈরি করেছি যা আবুল খায়ের স্টিলকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং বাংলাদেশের টেকসই অবকাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নতুন এই রোলিং মিল চালুর মাধ্যমে আবুল খায়ের স্টিল বাংলাদেশের নির্মাণ ইস্পাত বাজারে একধাপ এগিয়ে গেল। দেশে ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, উপকূলীয় উন্নয়ন, অবকাঠামো প্রকল্প ও ভূমিকম্প-সহনশীল নির্মাণে উচ্চমানের রিবারের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে, একেএস এখন আরও বড় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। এই প্রকল্প শুধু উৎপাদন সক্ষমতার দিক থেকেই নয়, বরং বাংলাদেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়নের ইতিহাসেও নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
এই বিষয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও লিগ্যাল বিভাগের গ্রুপ হেড শেখ শাবাব আহমেদ বলেন, ‘আবুল খায়ের স্টিলে আমরা অংশীদার হয়েছি বিশ্ববিখ্যাত জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লান্ট কনস্ট্রাকশন কোম্পানি SMS group GmbH-এর সঙ্গে, যাদের রয়েছে ১৫০ বছরেরও বেশি ঐতিহ্য ও দক্ষতা। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি অত্যাধুনিক স্টিল নির্মাণ প্রযুক্তি। বিশ্বের দ্রুততম রিবার রোলিং মিলের উদ্বোধন আমাদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এক বিশাল অগ্রগতি নির্দেশ করে। এটি আমাদের গুণমান, উদ্ভাবন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩,০০০-এরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, স্থানীয় জনশক্তিকে দক্ষতায় রূপান্তর করছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অর্থবহ অবদান রাখার অঙ্গীকারের প্রতীক। এই অত্যাধুনিক কারখানায় আবুল খায়ের স্টিল (AKS) উৎপাদন করবে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ-শক্তির স্টিল (৫০০ মেগাপাস্কাল বা তার বেশি), যা বাংলাদেশের সরকারকে সহায়তা করবে একটি নিরাপদ, ভূমিকম্প-সহনশীল ও টেকসই জাতি গঠনের লক্ষ্যে।’
** মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আবুল খায়ের গ্রুপ
** বিনিয়োগে আস্থা কম, তবুও ব্যবসা সম্প্রসারণে আবুল খায়ের গ্রুপ
** ভোজ্যতেল ও চিনি ব্যবসায় নামছে আবুল খায়ের গ্রুপ
** আবুল খায়েরের ৬ ব্র্যান্ড পেল ‘সুপারব্র্যান্ডস’ স্বীকৃতি
** ফয়’স লেকে মিলবে স্টারশিপ-মার্কসের পণ্য
** গুঁড়া দুধের বাজার ৬০০০ কোটি টাকার
** কেজিতে তেল বিক্রি, লিটারে বিক্রির সুপারিশ

