আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের নোয়াখালীর সেনবাগ ও দত্তেরহাট শাখা থেকে দুই শতাধিক ভুয়া নাম ব্যবহার করে ম্যানেজার আলমগীর হোসেন প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের নিজস্ব অডিট টিম ও নোয়াখালী জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনা প্রকাশের পর থেকে ম্যানেজার আলমগীর নিখোঁজ।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার সিংহ জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি সব শাখায় অভ্যন্তরীণ অডিট চালান, তখনই এ অনিয়মগুলো ধরা পড়ে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। হেড অফিস থেকে পাঠানো দুই সদস্যের অডিট টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। বর্তমানে অডিট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকে অভিযান চালায়। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদকের সরকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবেন। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময় নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক চিন্ময় চক্রবর্তী ও কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. ইদ্রিস।

ব্যাংকের নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, যেসব গ্রাহকদের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে, তাদের অনেকেই বাস্তবে অস্থিত্বহীন। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র ভুল, আবার অনেকের মোবাইল নম্বর অন্য কারও। এমনকি পূর্বে ঋণ নেয়া প্রকৃত গ্রাহকদের কাগজপত্র ব্যবহার করেও টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, যা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা কিছুই জানেন না।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক নিমাই চন্দ্র সরকারের নামে সাড়ে নয় লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন দেখানো হলেও তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। নোয়াখালী সদর উপজেলার মধ্যম করিমপুরের মো. আবদুল জলিলের নামেতিন লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। অপরদিকে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক গ্রাহকের নামেও তিন লাখ টাকা ঋণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমন কোনো গ্রাহকের পরিচয় দিতে পারেনি।
অভিযান সূত্রে জানা গেছে, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের দত্তেরহাট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর প্রায় এক বছর আগে সেনবাগ শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। দত্তেরহাট শাখায় দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে সেনবাগ শাখায় গিয়ে ৪২ জনকে ভুয়া সুবিধাভোগীর ঋণ দেখিয়ে আরও ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২০ অক্টোবর) দুদক অভিযান পরিচালনা করে। দুদকের অভিযান শুরু হওয়ার আগেই ব্যবস্থাপক আলমগীর পালিয়ে যান।

